◾প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম।
দয়া করে আমাকে উত্তর দিয়েন।
আমি এবং আমার স্বামী দুজনই অভিভাবক ছাড়া তিনজন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেছিলাম।আমাদের এই বিয়ের কথা ঐ তিনজন ব্যতীত কেউ জানে না।আমরা বিয়ের পর দুই জন দুইজনের নিজেদের পরিবারের সাথেই থেকেছি। ও ওর মা- বাবার সাথে এবং আমি আমার মা-বাবার সাথে।আমাদের মাঝে বিবাহসুলভ কিছুই হয় নি অর্থাৎ আমাদের সহবাস হয় নাই,আমরা কোনদিনও একসাথে থাকি নাই।
এখন আমি জানতে চাইঃ
বিয়ের পর বিভিন্ন কারনে যখনই আমাদের বিভিন্ন সময় ঝগড়া হতো মাঝেমাঝেই আমার স্বামী আমাকে বলতো আমাকে আর ফোন,ম্যাসেজ দিবা না,দিলে তালাক।
❝কখনো এভাবে বলতো একদম ফোন- ম্যাসেজ দিবা না। দিলে তালাক,একবারে তালাক।("একবারে তালাক" কথাটা সে পূর্বের কথাটাকে জোর দিতে ব্যবহার করেছিল)।
কখনো বলতো আরেকটা মেসেজ আসলে তালাক দিয়ে দিবো। ❞
একেক সময় একেকভাবে বলেছিল,কখনোই তালাকের সাথে কোন সংখ্যা যুক্ত করে নাই।কখনোই তিন তালাক বলে নাই।
(প্রত্যেকবারই নিয়ত ছাড়া,না বুঝে,শুধুমাত্র আমাকে ভয় দেখিয়ে ঝগড়া থামিয়ে দেওয়ার জন্য)
তখন আমি আর তাকে ফোন,ম্যাসেজ দিতাম না।
কিন্তুু পরে সে যখন আমাকে ফোন দেয় এবং আমি তাকে ঐ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বলে আমি আমার কথা তুলে নিছি,
ফোন- ম্যাসেজ দিও সমস্যা নাই,তার এই কথা শুনার পর আমি পুনরায় তাকে ফোন - ম্যাসেজ দিতাম।
এমন পরিস্থিতি আমাদের দুজনের মাঝে বহুবার হয়েছে(তিনবারের বেশী)।
❝প্রত্যেকবারই আমি যখন বলেছি তোমার কথা তুলে নাও এবং সে যখন নিজ মুখ দিয়ে বলেছে , আমি আমার কথা তুলে নিছি তারপর আমি তাকে
ফোন- ম্যাসেজ দিয়েছি।❞
উপরোক্ত সকল ঘটনা বিবরনের প্রেক্ষিতে আপনি যদি দয়া করে আমাকে বলতেন,আমাদের মাঝে আসলে কয় তালাক পতিত হয়েছে এবং পারিবারিকভাবে তার সাথে যদি আমার পুনরায় বিবাহ হয় তাহলে বিবাহ বৈধ,শরীয়তসম্মত এবং হালাল হবে কিনা।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
الجواب باسم ملهم الصواب
◾উত্তর
ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক শর্তযুক্ত তালাক হোক অথবা শর্তহীন তালাক হোক, কোন ধরনের তালাকই একবার দিলে তা প্রত্যাহার করা যায় না।
তাই প্রশ্নে বর্ণিত সুরতে স্বামী শর্তযুক্ত তালাক প্রত্যাহার করে নিলেও তালাক বহাল থাকবে।
কেননা মুসলিমরা নিজেদের শর্তসমূহ পালন করতে বাধ্য তা ভঙ করতে পারে না।
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ
-সুনানে আবু দাউদ হা/৩৫৯৪
আর সহবাসের পূর্বে তালাক দিলে তা বায়েন তালাক হয় এবং ইদ্দত পালন করা লাগেনা।
সুতরাং সে হিসেবে প্রশ্নে উল্লেখিত সুরতে এক তালাকে বায়েন হয়েছে এবং আপনারা চাইলে নতুনভাবে মোহর ধার্য্য করে বিবাহ করতে পারবেন।
◾দলীলসমূহ
☞আল কুরআনুল কারিম (১)
☞সুনানে আবু দাউদ (২)
☞নাইলুল আওত্বার (৩)
☞আদ দুররুল মুখতার (৪)
☞আল ইখতিয়ার (৫)
☞রদ্দুল মুহতার (৬)
☞ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াহ (৭)
☞ বাদাঈয়ুস সনাঈ (৮)
☞ ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ [অনলাইন]
উত্তর/১৫৫৩১৯
☞ ফাতাওয়ায়ে জামে'আ বানুরীয়্যাহ [অনলাইন]
উত্তর/১৪৪১১১২০০০৭৮
◾টীকা
(১)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا
[সূরা আল আহযাব]
(২)
وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ
[সুনানে আবু দাউদ হা/৩৫৯৪]
(২)
ﻗﻮﻟﻪ: " اﻟﻤﺴﻠﻤﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻭﻃﻬﻢ " ﺃﻱ: ﺛﺎﺑﺘﻮﻥ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻻ ﻳﺮﺟﻌﻮﻥ ﻋﻨﻬﺎ
[নাইলুল আওত্বার ৫/৩০৫]
(৩)
(ﻭﺇﻥ ﻓﺮﻕ) ﺑﻮﺻﻒ ﺃﻭ ﺧﺒﺮ ﺃﻭ ﺟﻤﻞ ﺑﻌﻄﻒ ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻩ (ﺑﺎﻧﺖ ﺑﺎﻷﻭﻟﻰ) ﻻ ﺇﻟﻰ ﻋﺪﺓ (ﻭ) ﻟﺬا (ﻟﻢ ﺗﻘﻊ اﻟﺜﺎﻧﻴﺔ) ﺑﺨﻼﻑ اﻟﻤﻮﻃﻮءﺓ ﺣﻴﺚ ﻳﻘﻊ اﻟﻜﻞ ﻭﻋﻢ اﻟﺘﻔﺮﻳﻖ
[আদ দুররুল মুখতার ৩/২৮৬ ]
(৪)
ﻭﻻ ﻋﺪﺓ ﻓﻲ اﻟﻄﻼﻕ ﻗﺒﻞ اﻟﺪﺧﻮﻝ،
[আল ইখতিয়ার ৩/১৭৪]
(৫)
ﺃﻥ اﻟﻄﻼﻕ اﻟﻤﻌﻠﻖ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﺤﻘﻖ ﺑﻌﺪ ﺗﺤﻘﻖ اﻟﺸﺮﻁ
[রদ্দুল মুহতার ৫/২৫০]
(৬)
وإذا أضافه إلى الشرط وقع عقيب الشرط اتفاقا
[ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াহ ১/৪২০]
(৭)
ﻭاﻷﺻﻞ ﺃﻧﻪ ﻣﺘﻰ ﻋﻠﻖ اﻟﻄﻼﻕ ﺑﺸﻲء ﻻ ﻳﻮﻗﻒ ﻋﻠﻴﻪ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺟﻬﺘﻬﺎ ﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺈﺧﺒﺎﺭﻫﺎ ﻋﻨﻪ، ﻭﻣﺘﻰ ﻋﻠﻖ ﺑﺸﻲء ﻳﻮﻗﻒ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺟﻬﺔ ﻏﻴﺮﻫﺎ ﻻ ﻳﻘﺒﻞ ﻗﻮﻟﻬﺎ ﺇﻻ ﺑﺒﻴﻨﺔ.
[বাদাঈয়ুস সনাঈ ৩/১১৯]
الله أعلم بالصواب و هو ولي الرشاد.
উত্তর প্রদানে:
মুফতী শাহেদ আমীন।
জামি'আ ইসলামিয়া দারুল ফালাহ ঢাকা।
