নিউজ ডেস্ক।     যেই বাচ্চারা পরপর ৪০ দিন নিয়মিত ফজরের নামাজ মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায় করবে তাদেরকে একটি করে সাইকেল উপহার দেওয়া হবে।   আলহামদুলিল্লাহ্! তাদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ১২০ +/- বাচ্চা রেজিষ্ট্রেশন করেছে এবং তারা এখন নিয়মিত ফজরের নামাজ মসজিদে এসে আদায় করছে।   মসজিদ কমিটি খুব সুন্দরভাবে প্রজেক্টটি সাজিয়েছে। এখানে উপহার সেই বাচ্চারাই পাবে যারা ৪০ দিনের মধ্যে ১ দিনও বাদ দিবে না। আর এর কঠিন পার্ট হলো, ৪০ দিনের মধ্যে যদি ১ দিনও বাদ পড়ে যায় তাহলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।   কিন্তু তাতে কি এসে যায়? ভাল কাজের প্রতিযোগিতা একটু দীর্ঘ তো হতেই পারে! আর বেনিফিট তো শুধু সাইকেল না। নামাজের মত ইসলামের এত স্ট্রং পিলারের যে প্রাক্টিস এই বাচ্চারা শুরু করেছে তারা তা তাদের বাকি জীবনেও ধরে রাখতে পারবে ইনশাআল্লাহ্।  এত ভোরবেলা এতগুলো বাচ্চা একসাথে মসজিদে ঢুকছে, অসাধারণ এই দৃশ্য দেখতে কার না ভাল লাগে? নামাজ শেষ হলে ওদের কিন্তু হাজিরার ব্যবস্থা আছে। স্কুলের মত তাদেরকে হাজিরা দিতে হয়। আর তখন আবার সবাইকে বিভিন্ন রকমের চকলেট দেওয়া হয়।   পুরো মসজিদ এখন বাচ্চা মুসল্লীদের পদচারণায় মুখরিত। ইতিমধ্যে মসজিদ কমিটি তাদের জন্য সহিহ নামাজ শিক্ষা ও বিভিন্ন ইসলামী আদব শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সম্ভবত আরো কিছু পরিকল্পনাও তাদের আছে। তা আমার জানা হয়নি।   উদ্যোগটা যদিও বাচ্চাদের জন্য কিন্তু এর পার্শ্ব সুবিধা আরো আছে। একটি বাচ্চা এত সকালে একা আসছে না! কেউ আসছে তার বাবার সাথে, আবার কেউ আসছে তার মায়ের সাথে, আবার কেউ বাবা, মা দুইজনকেই নিয়ে আসছে।   আমার ঠিক জানা নাই, ফজরের ওয়াক্তে আমাদের দেশে মহিলারা আসেন কি না? যদি এসেও থাকেন তবে তার সংখ্য সারাদেশে হাতে গোনা। এখানেও কিছু মায়েরা আসছেন তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে। এটিও একটি ভাল দিক।   সকালে মসজিদে আসার এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের একটি মাইন্ডসেটের পরিবর্তন হবে বলে আশা করি। আমাদের প্রায় সকল বাসায় আমরা বাচ্চাকে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়ানোর জন্য বলে থাকি, ‘তাড়াতাড়ি ঘুমোও, সকালে স্কুল আছে।’ ইনশা আল্লাহ্ এই ৪০ দিন আমরা বাচ্চাকে বলবো, ‘তাড়াতাড়ি ঘুমোও, ফজরে উঠতে হবে।‘   আমরা ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাচ্চাদের মাইন্ড সেট করে দিয়েছি যে সকালে স্কুল আছে বলেই তাকে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হয়। কিন্তু স্কুলের আগে এবং স্কুলের থেকেও যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সকালে আছে তা আমরা আমাদের বাচ্চাদের শেখায়ই নাস্কুলের থেকেও যে ফজরের গুরুত্ব বেশী তা আমরা বাচ্চাদের মন থেকে মুছে দিয়েছি। আর তাই যোহরে মসজিদে যত মুসল্লী দেখতে পাই তার থেকে প্রচুর কম মুসল্লীর উপস্থিত থাকে ফজরে।   তাই এ ধরনের উদ্যোগ হয়তো আমাদের এই স্ট্যাবলিশ মাইন্ড সেট এর পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।     যেকোন ভাল কাজের আদেশ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক আমাদেরকে দিয়েছেন। সুরা আল বাকারার ১৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ভাল কাজের প্রতিযোগিতা কর’। সুরা আল মায়েদার আয়াত ২ এ বলা হয়েছে, ‘তোমরা সৎ কর্ম ও তাকওয়ার কাজে একে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা কর।’  রাসুল সাঃ এর সাহাবীরা ভাল কাজের জন্য যেমন লালায়িত থাকতেন তেমনি একটি ভাল কাজ ছুটে গেলে প্রচন্ড দুঃখিত হতেন। মুসলিম শরীফ, হাদিস নংঃ ২২৩২ এ এসেছে, যখন ইবনে ওমর (রা.)-এর কাছে এ হাদিস পৌঁছল যে ‘যে ব্যক্তি জানাজায় উপস্থিত হয়ে নামাজ পড়া পর্যন্ত থাকে, তার জন্য এক কিরাত সওয়াব; যে ব্যক্তি জানাজায় উপস্থিত হলো এবং দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকল, তার জন্য দুই কিরাত সওয়াব। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক কিরাত পর্যন্ত অগ্রসর হতাম।’  অথচ আমাদের সমাজে আমরা কি দেখছি? ভাল কাজের ক্ষেত্রে অগ্রগামিতা তো দূরে থাক বরং এ ধরনের কাজের সমালোচনা কিভাবে করা যায় বা কিভাবে এগুলো বন্ধ করা যায় তারই প্রতিযোগিতা হয়।   মিরপুর DOHS সেন্ট্রাল মসজিদের এই অনন্য উদ্যোগকে শুধু সাধুবাদ নয় বরং এমন উদ্যোগ কিভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই চেষ্টাই করা উচিত। আর বেশী বেশী করে সকলকে জানানো প্রয়োজন যাতে অন্যরাও এমন আয়োজনে উৎসাহিত হয়।
Tags
ইসলামীক উপদেশ
